ঢাকা , বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫ , ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিশুখাদ্যে ভ্যাট বাড়ানোয় ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ২১-০১-২০২৫ ১১:২৭:১৭ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় : ২১-০১-২০২৫ ১১:৩০:১৮ পূর্বাহ্ন
শিশুখাদ্যে ভ্যাট বাড়ানোয় ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা সংবাদচিত্র: সংগৃহীত
বছর খানেক আগেই দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছাড়িয়েছে দুই অঙ্কের ঘর। খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখনও ১৩ ছুঁই ছুঁই। এমন পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ শতাধিক পণ্য ও সেবায় আমদানি, উৎপাদন, সরবরাহ পর্যায়ে শুল্ক ও ভ্যাট বাড়িয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এমনকি শিশুখাদ্যেও বাড়ানো হয়েছে ভ্যাট। এ নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই।

সাধারণ মানুষ বলছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফলে হাজারও জীবনের বিনিময়ে যে সরকার ক্ষমতায় বসেছে, মূল্যস্ফীতির এই সময়ে তাদের এমন সিদ্ধান্ত জনবিরোধী এবং অকল্যাণকর। শিশুখাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের ওপর ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান না করলে জীবনধারণ আরও কঠিন হয়ে যাবে।

রাজধানীর একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক সানজিদা ইসলাম শিশুখাদ্যে ভ্যাট বাড়ানোর বিষয়ে বলেন, ‘বছর না পেরোতেই শিশুখাদ্যের দাম বেড়ে যায়। গত বছর যে গুঁড়া দুধের প্যাকেট ছিল ৪৯০ টাকা, তা এখন ৭৫০ টাকা। তার ওপর এখন আবার ১৫ শতাংশ ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে, যা একেবারেই অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। এই সরকারের উচিত প্রয়োজনীয় দ্রব্যের পাশাপাশি শিশুখাদ্যের ওপর ভ্যাট না বাড়িয়ে বরং কমিয়ে মানুষের নাগালে রাখা।’

এই শিক্ষক আরও বলেন, ‘এ সরকার জনগণের সরকার। হাজারও মানুষের জীবনের বিনিময়ে ক্ষমতায় এসেছে। আগের ফ্যাসিস্ট সরকার যেখানে শিশুখাদ্যের ওপর ৫-৭ শতাংশ ভ্যাট রাখতো সেখানে এই সরকার যদি তা বাড়ায় তাহলে তো জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের আকাশচুম্বী প্রত্যাশা। কিন্তু দুঃখের বিষয়, হাসিনা সরকারের পতনের পরও জনকল্যাণকর কোনও কাজ এই সরকার করতে পারেনি।’

পুরান ঢাকার রায় সাহেব বাজারের লাজ ফার্মায় শিশুদের জন্য নেসলে কোম্পানির সেরেলাক কিনতে আসেন ফারজানা ছবি নামের এক ক্রেতা। পেশায় গৃহিণী। তিনি বলেন, ‘আমার দুই বাচ্চা। বড় ছেলের বয়স ৭, ছোট ছেলের দেড় বছর মাত্র। ছোটবেলা থেকেই দুই জনকে নেসলের সেরেলাক, গুঁড়া দুধ এসব খাবার খাওয়াই। প্রতিবছর ভ্যাট বাড়ানোর ফলে এসবের দাম বাড়ে। ভেবেছিলাম এ বছর তার ব্যতিক্রম হবে। কারণ এটা জনগণের সরকার। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে এসেছে। কিন্তু এই সরকারও ভ্যাট বাড়িয়েছে। বলা বাহুল্য, এর কারণে আমাদের মতো মধ্যবিত্তের সন্তানদের পুষ্টির সঠিক জোগানে ব্যাঘাত ঘটবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির শিশুখাদ্য আছে। এর মধ্যে বহুজাতিক কোম্পানি নেসলে, নিউট্রিসিয়া কোম্পানির তৈরি করা শিশুখাদ্য বেশ জনপ্রিয়। এছাড়াও বেবিকেয়ার, বেবিল্যাক, আবুল খায়ের গ্রুপের সরবরাহ করা দুধ মাদারস স্মাইল প্রাইমা শিশুখাদ্যের জন্য বেশ পরিচিত।শিশুখাদ্য বিক্রেতারা জানান, বছর না পেরোতেই ভ্যাটের কারণে নেসলে কোম্পানির সেরেলাক তিন ধরনের ফলের প্যাকেটসহ ভাত-দুধ, গম-দুধ, গম-আপেল-চেরি ও ৫ ধরনের ফলের সেরেলাক, নিডো গুঁড়া দুধের দাম ৫০-৬০ টাকা বেড়ে যায়। গত বছরও প্রত্যেকটি পণ্যে এমন দাম বেড়েছে। নিডো ফরটিগ্রো প্যাকেটের দাম বেড়েছিল দেড়শ’ থেকে আটশ’ টাকা পর্যন্ত। এখন আবার ভ্যাট বাড়ায় দাম আরও বেড়ে যাবে।

শিশুখাদ্য গুঁড়ো দুধের বাজার যাচাইয়ের জন্য কথা হয় রাজধানীর ওয়ারী এলাকার একটি ফার্মেসির বিক্রয়কর্মী শরাফত আলীর সঙ্গে। গত ছয় বছর ধরে তিনি ফার্মেসিতে কাজ করেন, বিশেষ করে শিশু খাদ্যের সাইটে। তিনি জানান, দুই বছর আগে যে গুঁড়ো দুধের প্যাকেটের দাম ৪২০ টাকা ছিল, তা এখন ৬৭০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ৬৫০ টাকার দুধ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২৫০ টাকায়।এই বিক্রয়কর্মী আরও বলেন, ‘যেসব কোম্পানি শিশুখাদ্য বিক্রি করে তারা পণ্যের দাম ছয় মাস অন্তর একবার করে বাড়ায়। প্রথমত সরকারের ভ্যাট বৃদ্ধির প্রভাবে দাম বাড়ে। দ্বিতীয়ত বছরের যেকোনও সময় ডলারের মূল্যবৃদ্ধি বা কোম্পানির নির্দেশনা- এসব বাহানা দিয়ে একবার বাড়ে। আর আমাদের কথা শুনতে হয় কাস্টমারদের। অথচ দাম বৃদ্ধির জন্য আমরা নয়, কোম্পানি এবং সরকার দায়ী। আমরা তো কেবল বিক্রি করি।’এ প্রসঙ্গে রাজধানীর মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা তাজিম দেওয়ান বলেন, ‘বিগত সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ব্যর্থ ছিল। সবকিছুতেই ভ্যাট বৃদ্ধি ছিল তার বদঅভ্যাস। আমরা সাধারণ মানুষ সেই সরকারকে দেশ ছাড়া করে এই সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছি। কিন্তু এই সরকারও দেখছি সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করছে না। সত্যি বলতে এই সরকারের বিরুদ্ধে এত তাড়াতাড়ি মাঠে নামার চিন্তা মাথায় আসবে ভাবিনি। যেহেতু এটা আমাদের সরকার, আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করছি জনবিরোধী কোনও সিদ্ধান্ত বা আচরণ যেন না করে।’

শিশুখাদ্যসহ বিস্কুট, কেক এবং অন্য প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের ওপর ভ্যাট বৃদ্ধিতে ক্ষোভ জানিয়েছে বেকারি মালিকরা। এনবিআরকে উদ্দেশ করে রাজধানীর কোতোয়ালির বাসিন্দা বেকারি মালিক শাহরিয়ার আহমেদ বলেন, ‘৫ টাকার বিস্কুট বা চকলেটে আমরা লাভ করি না। এসব বাজার ধরে রাখার পলিসি। এখন যদি ভ্যাট বাড়ে সাধারণ মানুষ এসব থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। রাজস্ব বাড়ানোর অনেক উপায় আছে, অন্তর্বর্তী সরকারের যদি সেসব না জানা থাকে আমাদের সঙ্গে বসলে আমরা দেখিয়ে দেবো।’এই বেকারি মালিক আরও বলেন, ‘ছোটখাটো প্রোডাক্টের যদি দাম বৃদ্ধি না হয়, তবে তার প্যাকেটের মধ্যে পরিমাণে কমিয়ে দেয়।’ উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, ‘আগে চিপসের যে প্যাকেটের দাম ১০ টাকা ছিল, এখনও কিন্তু তাই আছে। কিন্তু আগের তুলনায় প্যাকেটের ভেতর চিপস অনেক কম থাকে। আমরা পণ্যের কোয়ালিটি খারাপ করে কখনোই লাভ করতে চাই না। আমাদের প্রত্যাশা, সরকার অযৌক্তিক ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করবে।’

এদিকে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ওপর থেকে অতিরিক্ত ভ্যাট প্রত্যাহার করা না হলে সচিবালয়ের সামনে সমাবেশ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশে অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা)। এর সভাপতি এম এ হাশেম বলেন, ‘ভ্যাট বাড়ালেই রাজস্ব আদায় বাড়ে না, রাজস্ব বাড়ানোর অনেক উপায় আছে।’ সরকার ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে না সরলে সচিবালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও কারখানা বন্ধ করার হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।

বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এনআইএন


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ